আন্তর্জাতিক ডেস্ক ::
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলায় সেনাবাহিনীর নির্যাতনের ভয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন জামালিদা বেগম-গার্ডিয়ান
গত সপ্তাহে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের (ইউএনএসসি) প্রতিনিধিদের সঙ্গে যেসব রোহিঙ্গা গ্রামবাসী কথা বলেছেন, দেশটির নিরাপত্তা সংস্থার টার্গেটে পরিণত হওয়ায় তারা আত্মগোপনে চলে গেছেন।
এক রোহিঙ্গা প্রতিবেদকের বরাতে ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান এ তথ্য জানিয়েছে।
ইউএনএসসি প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপে রোহিঙ্গারা তাদের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ভয়াবহ সহিংসতার অভিজ্ঞতার বিবরণ দেন।
এখন মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তাদের বিরুদ্ধে ধরপাকড় অভিযান শুরু করলে তারা আত্মগোপনে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোহিঙ্গা প্রতিবেদক গার্ডিয়ানকে জানান, রাখাইন রাজ্যে ইউএনএসসি প্রতিনিধিদের পরিদর্শনের আগে মংডু শহরতলীয় কৃর্তপক্ষ আশপাশের গ্রামের রোহিঙ্গাদের সতর্ক করে দিয়েছেন যাতে তারা সরকার কিংবা নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে বিরূপ কিছু না বলেন।
যারা এ হুশিয়ারির অবাধ্য হবেন, তাদের কঠিন পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে বলে হুমকি দিয়েছিল মিয়ানমার সরকার।
এ হুমকির পর যখন নলবইন্না গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দা জাতিসংঘের প্রতিনিধিদের কথা বলতে অনাগ্রহ দেখান, তখন তিন কিশোর ও এক মধ্যবয়সী নারী প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেন।
জাতিসংঘের প্রতিনিধিরা চলে যাওয়ার পর মিয়ানমার সরকার, সামরিক গোয়েন্দা ইউনিটের এজেন্ট ও বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সদস্যরা ওই গ্রামে আসেন।
তারা প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলা রোহিঙ্গাদের খুঁজে বের করতে তল্লাশি শুরু করেন। কিন্তু সরকার ও নিরাপত্তা সংস্থার কাছ থেকে প্রতিশোধের ভয়ে ওই চার রোহিঙ্গা আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হন।
ওই প্রতিবেদক বলেন, জাতিসংঘ প্রতিনিধিদের সঙ্গে আসা কয়েকজন গোয়েন্দা গ্রাসবাসীদের সঙ্গে তাদের কথোপকথন ভিডিও করেছেন। গোয়েন্দারা গ্রাম প্রশাসক ও নলবইন্না গ্রামবাসীকে ভিডিও দেখিয়ে ওই চারজনকে খুঁজে বের করতে সহায়তা চেয়েছেন।
রোহিঙ্গা প্রতিবেদক বলেন, তারা মিয়ানমারের ভেতরে রয়েছেন, নাকি সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে চলে গেছেন, তাও আমাদের জানা নেই।
বাংলাদেশ ভিত্তিক রোহিঙ্গা রাজনৈতিক কর্মী কো কো লিন বলেন, গ্রাম প্রশাসক ও গ্রামবাসীরা সেনাবাহিনীকে বলেছেন, তারা ওই নারী ও কিশোরদের চেনেন না। কিন্তু নিরাপত্তা বাহিনী গ্রামজুড়ে তল্লাশি অব্যাহত রেখেছেন।
তিনি বলেন, ওই চার রোহিঙ্গাকে সত্য বলার খেসারত দিতে হচ্ছে। অতীতেও এরকম ঘটনায় অনেককে নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে।
১ মে রাখাইনে দিনব্যাপী পরিদর্শনে জাতিসংঘ প্রতিনিধিরা কয়েকটি গ্রামে যান। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সহিংসতার সরাসরি বিবরণ শুনতেই তারা এ পরিদর্শন করেন।
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক ও গণমাধ্যমকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতন ও নিপীড়নের বর্ণনা দেয়ায় এর আগেও অনেক রোহিঙ্গাকে টার্গেটে পরিণত হতে হয়েছে।
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলায় ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে রোহিঙ্গা বিধবা নারী নুর জাহান ও জামালিদা বেগমকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে হয়েছে।
এছাড়াও জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানকে নিজেদের দুর্গতির কথা বলায় চার রোহিঙ্গাকে কারাগারে আটক করা হয়।
পাঠকের মতামত: